https://koulal.com/2018/08/24/%E0%A6%86%E0%A6%AE-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC/
মুর্শিদাবাদ জেলার কথা মনে করলেই যে সব বিষয়গুলি আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে তার মধ্যে অন্যতম হল এই জেলার আম।এখানকার আম বাংলায় নবাবী শাসন চালু হওয়ার বহু আগে থেকেই বিখ্যাত।এক সময় মুর্শিদাবাদের আম বলতে চুনাখালি পরগনার আমকে বোঝাত।চুনাখালির আম ছিল স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।বাংলায় নবাবী শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে মুর্শিদাবাদ হয় বাংলা সুবার রাজধানী।নবাব এবং তার উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের বাসস্থান।নবাবদের আম এতই প্রিয় ছিল যে তাঁদের পৃষ্টপোষকতায় মুর্শিদাবদের আম পরিণত হয় রাজকীয় ফলে।দেশের নানান প্রান্ত থেকে ভাল আমের চারা সংগ্রহ করে তা দিয়ে সমগ্র মুর্শিদাবাদ জুড়ে নবাবরা বহু আম বাগান তৈরী করেছিলেন।আজ সেই সব বাগানের অধিকাংশই ধ্বংশ প্রাপ্ত।যেগুলি আছে তাতেও তেমন ফল ধরেনা।
বর্তমানে মুর্শিদাবাদের শহরগুলিতে জনআধিক্যের জন্য অধিকাংশ আম বাগানই ধ্বংস প্রাপ্ত।তাই জেলার শহরাঞ্চলে তেমন কোন আম বাগানের দেখা না মিললেও মুর্শিদাবাদের গ্রাম্য এলাকায় আজও বহু আম বাগানের দেখা মেলে।এই গ্রাম্য বাগানগুলিতে বিভিন্ন স্বাদে ও গন্ধে ভরা নানান প্রজাতির আম গাছে সমৃদ্ধ।
আম মুর্শিদাবাদের গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণের আবেগের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়েগেছে।গ্রীষ্মকালে গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে আমবাগানের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষের সুশীতল আশ্রয় হয়ে ওঠে এই আমবাগানগুলি।তাঁর পর গাছে মুকুল এলে শুরু হয় এক অন্য উন্মাদনার।সমগ্র গ্রাম ভরে ওঠে আম্র-মুকুলের মিষ্টি সূবাসে।
আম একটু বড় হতেই গ্রাম জুড়ে কাঁচা আম খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। সকাল বেলায় তখন রোজ স্থান পায় কাঁচা আমের চাটনি দিয়ে রুটি।কখনও আবার ভাতের সাথে আম সেদ্ধ অথবা আম-ডাল।কিম্বা তপ্ত দুপুরে আমপোড়ার শরবৎ।কখনও আম বাগানে গিয়ে লঙ্কাগুড়ো ও লবন মেখে শুরু হয় কাঁচা আম খাওয়ার প্রতিযোগিতা।
কালবৈশাখী ঝড় এবং সেই ঝড়ে আম কুড়তে যাওয়া গ্রাম্য সংস্কৃতির একটি দিক।ঝড় উঠলেই হাতে বস্তা কিম্বা ব্যাগ নিয়ে গ্রাম্য বালকরা দৌড় দেয়। হোকনা সকাল দুপুর কিম্বা মাঝ রাত্রি, ঝড়ের ডাকে সাড়া দিয়ে বেরোনো চাই সবার।কালবৈশাখীর পর গাছ থেকে ঝরে পড়া আম পরদিন কেটে রোদে শুকিয়ে আমচুর ও আচার করা হয় সারা বছর খাওয়ার জন্য।
এর মধ্যেই ধীরে,ধীরে আম পাকতে শুরু হয়।আমবাগানগুলি পাকা আমের সুগন্ধে ভরে ওঠে।বাগানে বসানো হয় আম পাহারাদার।বাগানমালিকের বাড়ির সদস্য কিম্বা গ্রামের কিছু সাহসী যুবকদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।বাগানেই বাঁশের মাচায় কিম্বা বাগানের ভেতরে অস্থায়ী তাবু খাটিয়ে পাহারাদারের দপ্তর তৈরি হয়।গাছের সমস্ত আম শেষ হওয়া অবদি আম পাহারাদাররা বাগানেই অবস্থান করে।আম পাহারা দিতে গিয়ে আমের সাথে তাদের বেশ সখ্য গড়ে ওঠে।সারাদিন গাছ পাকা আম খেয়ে তাদের বেশ সুখেই সময় কাটে।আম পাহারা দেওয়ার এই কয়েকটি দিন পাহারাদারদের আনন্দেরও সীমা থাকেনা।পাহারাদারদের জন্য বাড়ী থেকে খাবার এলেও প্রায়ই তারা নিজেদের মতো করে বাগানেই মাংস ভাত রান্না করে মনের সুখে খায়।বাগানে রাত কাটাতে গিয়ে পাহারাদারদের বহু ভৌতিক গাছম ছমে ঘটনারও সাক্ষী হতে হয়।
আম পাকার মরসুমে মুর্শিদাবাদের গ্রাম্য জনগণ আনন্দে মেতে ওঠে।বাগান মালিকরা গাছ থেকে আম পেড়ে সেগুলি ভাগ করে।পাড়া প্রতিবেশী,আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে একটা অংশ নিজেদের খাবার জন্য রেখে বাকি আম বিক্রি করে দেয়।কখনও আবার আম বাগান থেকেই আম লরি বোঝায় করে পাড়ি দেয় ভিন রাজ্যে। এছাড়া কিছু আম ঝুড়ি ভরে গঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে বসে আমের হাট।শুরু হয় দামাদামী।আমের হাট থেকে গঞ্জের খুচরো বিক্রেতারা আম কিনে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য।গ্রামের টাটকা আম পেয়ে গঞ্জের মানুষরাও মেতে ওঠে আমে।
পাকা আমকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য মুর্শিদাবাদে শুরু হয় উৎসব।বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিমন্ত্রণ করা হয় তাদের পাকা আম খাওয়ানোর জন্য।উপহার হিসেবেও পাঠানো হয় আম।পাকা আম খাওয়া নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা,আম মুড়ি,দুধ-আম,আম-দই,আম-ভাত,দুধ রুটি আম আমের রস, কোন কিছুই বাদ থাকেনা।এক কথায় মুর্শিদাবাদের গ্রাম্য জীবনে আম প্রাণের সঞ্চার করে।
https://koulal.com/2018/08/24/%E0%A6%86%E0%A6%AE-%E0%A6%93-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC/
Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.