চৈত্র মাসে বেশ কয়েকদিন ঝড়ো বাতাস হয়েছে। তবে বৈশাখ মাসের চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কালবৈশাখী তাণ্ডবলীলা দেখায়নি। যার কারণে আম চাষিরা আশা করছেন রাজশাহীতে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। তারা বলছেন গাছের মুকুল গুটিতে পরিণত হবার পর ঝড়ো বাতাসে কিছুটা আম ঝরে পড়েছে। তবে তা ক্ষতির পরিমাণের দিক থেকে তুলনামূলক কম। প্রায় গাছের আমের সাইজ এখন মাঝারি আকারের হয়েছে। পাকতে শুরু করবে সপ্তাহ তিনেক পরেই।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের দাবি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ মেট্রিক টন।
এদিকে চলতি মওসুমে আম গাছ থেকে নামানোর সময়ও নির্ধারণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আগামী ২০ মে থেকে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে শুরু হবে আম নামানোর কাজ এমন টা ধারনা করছেন চাষিরা।
রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকার বাগান বা গাছের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে আম আর আম। মাঝে মধ্যে দু’একটি গাছে ফাঁকা দেখা গেলেও সারি সারি গাছের ঝুলন্ত আমে তা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। আর ক’দিন পরেই দৃশ্যমান হবে পাকা রংয়ের চেহারা। বাগানে বাগানে এখন আম টিকিয়ে রাখার জন্য পরিচর্যায় ব্যস্ত মালিক ও চাষিরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণ মুকুল গাছে এসেছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, এখন আম চাষের ধরন পাল্টেছে। চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ ও বাজারজাত করে আসছেন। গত কয়েক বছরে বেড়েছে আম চাষের আওতা। এসব বাগানে আমের রাজা ফজলি, গোপালভোগ ছাড়াও তোতাপরি, বৌভুলানী, রানীপছন্দ, জামাইখুসি, গোপাললাড়ু, হিমসাগর, বৃন্দাবন ও হালের রানী পছন্দ ও আম্রপালি তো রয়েছেই। এবার প্রায় ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে শিলা ও ঝড়ো বাতাস হয়েছে। এতে তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্ত এখন উপর্যুপরি যদি শিলা বৃষ্টি ও কাল বৈশাখী ঝড় হয় তাহলে আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমে যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। আর এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, এ অঞ্চলে প্রতিবছর প্রায় আড়াইশ’ জাতের আম উৎপন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে এ বছর ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লখনা ও মোহনভোগ জাতের আমের চাষ বেশি হয়েছে। রাজশাহীর ৯টি উপজেলায়ই আম চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি হয় বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট ও গোদাগাড়ীতে।
জেলার বাঘার আমোদপুর গ্রামের আম চাষী রহমান জানান, গাছে এবার মুকুল অনেক এসেছিল। তবে মধ্যে গুটি হবার সময় ঝড়ো বাতাসে আম ঝরে পড়ে। নইলে গাছে পাতার তুলনায় আমের দেখা মিলত বেশী। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনেকটাই অনুকূলে রয়েছে। আর সপ্তাহ তিনেক এমনটি থাকলে আমের ফলন ভালো হবে বলে আশা করেন তিনি।
মহানগরীর রায়পাড়া এলাকার আম চাষী শামসুল বলেন, আমের এখন বাড়ন্ত সময়। প্রত্যেকটা গাছে আমের সাইজ মাঝারি হয়ে গেছে। আকারে বড় হবার সাথে সাথে সপ্তাহ তিনেক পরেই আম পাকা শুরু হবে। এই সময়কালটা আমের ফলনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করে। বড় ধরনের ঝড় বাদল আর সাথে শিলা বৃষ্টি হলে উৎপাদন কমে যাবার সাথে সাথে আমের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন শিলা লাগলে আম নষ্টের ভাগ বেড়ে যায়। তবে এখন পর্যন্ত বাগানে যে পরিমাণ আম রয়েছে তা শেষ পর্যন্ত থাকলে সকলেই লাভবান হবে বলে আশা করছেন তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, আম বড় হতে হতে এক অথবা দুইটি কালবৈশাখী ঝড় হলে আমের বিশেষ ক্ষতি হবে। অতিরিক্ত ঝড় আমের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম জানান, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। যদি আম পরিপক্ব হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকৃতিতে উপর্যুপরি শিলা বৃষ্টি ও কাল বৈশাখী হানা না দেয় তাহলে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।